ছাত্র-ছাত্রীদের চোখের যত্ন নেবেন কিভাবে?
পড়ার আলো
আগুন আবিষ্কারের সঙ্গেই মানবসভ্যতা সূর্যের পাশাপাশি আলোর এক বিকল্প সন্ধান পেয়েছিল। আগুনের ওপর ভর করেই মানুষ রাতের বেলাতেও কাজ করতে থাকলো। পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলল শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান। তারপর একদিন মানুষ বৈদ্যুতিক আলো আবিষ্কার করে ফেলল শুরু হলো আরও এক নতুন অধ্যায়।
আবিষ্কারের পর থেকে বৈদ্যুতিক আলোর অনেক বিবর্তন হয়েছে বাল্ব থেকে টিউব সিএফএল হয়ে হাল আমলের এলইডি। তবে এত শত পছন্দের মধ্যে অনেকের প্রশ্ন থাকতেই পারে কোন আলো পড়ার জন্য ভালো এক্ষেত্রে উত্তর হলো সাদা আলো পড়ার জন্য ভালো। তাই পড়ার সময় বাল্বের হলুদ আলোয় নয় টিউব বা সিএফএল লাইটের আলোতেই পড়া ভালো। তবে এলইডি লাইটের তীক্ষ্ণতা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় সাদা আলো হওয়া সত্ত্বেও পড়ার সময় এলইডি লাইট ব্যবহার করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে এলইডি লাইটের আলো বা বাল্বের আলো চোখে অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে আর সকালে পড়ার ক্ষেত্রে জানালা খুলে সূর্যের আলোয় পড়া যেতেই পারে। এবার প্রশ্ন হতে পারে, ঠিক কতটা আলো প্রয়োজন? পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে যাতে একটু দূর থেকেই বই বা খাতার অক্ষরগুলি পরিষ্কার দেখা যায়। অপর্যাপ্ত পড়লে চোখের ওপর চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন এমনটা চললে চোখে পাওয়ার আশা থেকে আরো নানা ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
একনাগাড়ে কতক্ষণ পড়া উচিত
কম্পিউটার মোবাইল বা ট্যাবে পড়াশোনা
এখনকার হাইটেক যুগে পড়াশোনার সঙ্গে প্রযুক্তি জুড়িয়ে গিয়েছে। কম্পিউটার মোবাইল ট্যাবেই চলছে অজানাকে জানার পর্ব। তবে দীর্ঘক্ষন এই জাতীয় টেকনোলজির ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এক্ষেত্রেও ২০-২০-২০ নিয়ম মানতে হবে। অর্থাৎ ২০ মিনিট স্ক্রীনে মনোযোগ দেওয়ার পর ২০ সেকেন্ডের জন্য অন্ততপক্ষে ২০ ফুট দূরের কোন জিনিস দেখতে হবে।
এখানে বলা দরকার, অনেকেই পড়ার থেকে বিরতি নেওয়ার সময় মোবাইল বা কম্পিউটার এ সময় দেয় এই অভ্যাস কিন্তু চলবে না এক্ষেত্রে চোখ ভালো রাখতে চাইলে স্ক্রীন টাইমকেও পড়ার টাইম এর মধ্যে ধরতে হবে। অর্থাৎ ২০ মিনিট বই খাতায় মনোযোগ দেওয়ার পর ২০ সেকেন্ড মোবাইলে চোখ রাখলে কোনো লাভ নেই। বরং 17 মিনিট পরে তিন মিনিট মোবাইল ঘেটে ২০ সেকেন্ডের জন্য
অন্ততপক্ষে ২০ ফুট দূরের কোন জিনিস দেখতে হবে। তবে পরীক্ষার সময় এমন পদ্ধতি মেনে চলাটা ঠিক নয়। তাই যতটা সম্ভব মোবাইল বা কম্পিউটার এড়িয়ে চলতে হবে। মোটের ওপর দিনের 45 মিনিটের বেশি স্ক্রিনে চোখ রাখা ঠিক হবে না। একইভাবে পরীক্ষার সময় টিভি দেখার সময় 30 মিনিট থেকে 1 ঘন্টার মধ্যে মেরে ফেলতে হবে।
চোখ দেখে কতটা দূরে বই রাখা দরকার?
একদম চোখের খুব কাছে বা চোখের অনেক দূরে বই-খাতা রেখে পড়লেও কিন্তু চোখের সমস্যা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো পড়ার সময় চোখের থেকে এক হাত দূরত্বে বই-খাতা রেখে পড়তে হবে আর লেখার সময় খাতার দূরত্ব হবে চোখের থেকে হাফ হাত।
রাত জেগে পড়া
রাত জেগে পড়ার সঙ্গে সরাসরি চোখের কোন যোগ
সূএ নেই। সঠিক আলোর বন্দোবস্ত থাকলে রাতের বেলায় পড়ার ক্ষেত্রে অন্তত চোখের দিক থেকে কোন সমস্যা নেই।
পড়ার ভঙ্গি
মুখ গুঁজে পড়া, শুয়ে পড়া বা অন্য কোন ভঙ্গিতে বসে খুব ঘাড় ঝুঁকিয়ে পড়লে চোখের ওপর চাপ পড়ে। তাই চেয়ারে বসে পড়ার টেবিলে বই-খাতা রেখে পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাড়িতে পড়ার টেবিল না থাকলে বাবু হয়ে বসে জল-চৌকির উপর বই-খাতা রেখে পড়া যেতে পারে।
দীর্ঘদিন এভাবে চললে কি সমস্যা হতে পারে
কোনরকম নিয়ম না মেনে বই-খাতায় চোখার অভ্যাস থাকলে কিন্তু চোখের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রথমত, চোখ অস্থির হয়ে যায়,
চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে,
চোখ জ্বালা করে,
মাথায় ব্যাথা,
বিকেলের দিকে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে,
হঠাৎ হঠাৎ চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে পরে আবার নিজে থেকেই কিছু সময় বাদে ঠিক হয়ে যায়, চোখ শুষ্ক হওয়ার আশঙ্কা থাকে,
এমনকি চোখে পাওয়ার পর্যন্ত আসতে পারে।
তাই বাচ্চার চোখে এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
চোখ ভালো রাখতে কি করা দরকার
অন্তত পক্ষে বছরে একবার চোখের চিকিৎসকের কাছে রুটিন চেকআপ করিয়ে নেওয়া দরকার। এছাড়া, চোখ ভালো রাখতে অবশ্যই খাবারের দিকে নজর দিতে হবে, পড়ুয়ার ডায়েটে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন, গাজর সমস্ত সবুজ শাকসবজি রাখা চাই। পাশাপাশি মাছের মধ্যে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের পক্ষে ভালো।
0 comments:
Post a Comment